: পৃথিবীতে যত প্রকার খেলাধুলা চালু আছে তার মধ্যে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপই সবচেয়ে প্রাচীন। একটি মানবশিশু জন্মের পর তার বেড়ে উঠার বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। আদিম যুগে মানুষ প্রাণ ধারণের জন্য শিকার ও প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে দৌড় ও লাফ দিতে হতো। আবার শিকার বা শত্রুকে ঘায়েল করতে নিক্ষেপের সাহায্যে নিতে হতো। এই দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপ তাদের জীবনযাপনের কাজে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীকালে মানব সভ্যতার ক্রম বিবর্তনে এই দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপই ব্যক্তিগত পারদর্শিতা ও চিত্তবিনোদনের ক্রীড়াতে রূপান্তরিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে ৫০০০মিটার, ১০,০০০ মিটার দৌড়, ৪x৪০০ মি. রিলে দৌড়, হার্ডেল দৌড়, ৩০০০ মি স্টিপল চেজ, হাঁটার ইভেন্টস ও হ্যামার নিক্ষেপ আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় না। দৌড় প্রতিযোগিতার সাধারণ নিয়মাবলি
১. দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য ৪০০ মিটার ট্র্যাক আইনসম্মত ট্র্যাক।
২. দৌড়ের সময় অ্যাথলেটগণ বামপাশ ১ম লেনের দিকে রেখে দৌড়াবে।
৩. স্প্রিন্ট অর্থাৎ ১০০ মি, ২০০ মি, ৪০০ মি, হার্ডল দৌড়, ১০০ x ৪ মি দৌঁড়-এর সময় লেন পরিবর্তন করা যাবে না। যার যার নির্দিষ্ট লেনে দৌড়াতে হবে।
৪. ৮০০ মি, ১৫০০ মি ও ৪x৪০০ মি রিলে দৌড়ের সময় লেন পরিবর্তন করা যাবে। কখন কীভাবে লেন পরিবর্তন করতে হবে তা দৌড় শুরু হওয়ার আগেই ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
৫. স্প্রিন্ট-এর জন্য স্টার্টিং ব্লক ব্যবহার করতে হবে। তবে অন্যান্য দৌড়ের ক্ষেত্রে স্টার্টিং ব্লক ব্যবহার
বাধ্যতামূলক নয়।
৬. দৌড়ের শেষ মাথায় দুইটি ফিনিশিং স্ট্যান্ড থাকবে ।
৭. ফিনিশিং ফিতায় 'টর্সো' আগে স্পর্শ করাতে হবে।
৮. দৌড়ের আরম্ভ ও শেষ রেখা সাদা রং দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
৯. সব দৌড়ের আরম্ভ এক জায়গা থেকে হয় না, কিন্তু শেষ হয় একই স্থানে।
১০. আরম্ভকারীর পিস্তলের আওয়াজে সব দৌড় শুরু হবে।
১১. স্প্রিন্ট দৌড় আরম্ভের সময় আরম্ভকারী তিনটি শব্দ ব্যবহার করবে।
ক. On your mark অর্থাৎ আরম্ভ স্থানে যাও
খ. Set অর্থাৎ দৌড় শুরুর চূড়ান্ত অবস্থান।
গ. Fire বা পিস্তলের আওয়াজ।
১২. একবার ফলস স্টার্ট হলে সে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ যাবে।
১৩. দূরপাল্লার দৌড়ের আরম্ভের সময় Set ব্যবহার করতে হয় না শুধু On your mark বলার পরেই বন্দুকের আওয়াজ হয়।
স্প্রিন্ট দৌড়ের কৌশল : সর্বোচ্চ গতিবেগ সম্পন্ন দৌড়কে স্প্রিন্ট বলে। ১০০ থেকে ৪০০ মিটার পর্যন্ত সব রকম দৌড় স্প্রিন্ট দৌড়ের অন্তর্ভুক্ত। স্প্রিন্ট দৌড়ের স্টার্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক স্টার্ট হলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় । তিনভাবে স্প্রিন্ট দৌড়ের স্টার্ট নেওয়া যায়—
১. বাঞ্চ স্টার্ট (Bunch Start)
২. মিডিয়াম স্টার্ট (Medium Start)
৩. অ্যালোংগেটেড স্টার্ট (Elongated Start)
১. বাঞ্চ স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে এক পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের টিপ সামনের পায়ের
হিলের সাথে এক লাইনে থাকবে।
২. মিডিয়াম স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে দুই পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের হাঁটু ও সামনের
পায়ের বল এক লাইনে থাকবে।
৩. অ্যালোংগেটেড স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে তিন পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের হাঁটু ও সামনের পায়ের হিল এক লাইনে থাকবে।
স্প্রিন্ট দৌড়ের চারটি পর্যায় (Phase) আছে।
১. আরম্ভ রেখার অবস্থান (On your mark)
২. দৌড় শুরুর পূর্ব মুহূর্তের অবস্থান (Set)
৩. ব্লক থেকে উঠা (Drive)
৪. গতিবেগ বৃদ্ধি করা (Acceleration)
১. আরম্ভ রেখার অবস্থান : আরম্ভকারী On your mark কলার সাথে সাথে অ্যাথলেটগণ আরম্ভ রেখার পিছনে ২০-২৫ সে:মি: দূরে পা রেখে এবং আরম্ভ রেখা বরাবর দুইহাতের আঙ্গুল মাটিতে রাখতে হবে। স্টার্টিং ব্লকে পা রাখলে তা নির্দিষ্ট জায়গায় আগেই রাখতে হবে। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। হাঁটু ভেঙ্গে হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসতে হবে ।
২. দৌড় শুরুর পূর্ব মুহূর্তের অবস্থান : আরম্ভকারী সেট বলার সাথে সাথে পিছনের পা'কে সোজা করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে। কোমর উপরে উঠবে। শরীরের সম্পূর্ণ ভর থাকবে হাতের উপর। এ সময় স্থির হয়ে থাকতে হবে এবং ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাবে ৷
৩. ব্লক থেকে ওঠা : বন্দুক/পিস্তলের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে উঠে না দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে
যেতে হবে।
৪. গতিবেগ বৃদ্ধি করা : এরপরই গতিবেগ বৃদ্ধি করে দৌড়াতে হবে।
দাঁড়িয়ে আরম্ভ : মধ্যম ও দীর্ঘ দূরত্বের দৌড় দাঁড়িয়ে আরম্ভ নিতে হয়। আরম্ভকারী On your mark বলার সাথে সাথে আরম্ভ রেখায় এসে দাঁড়াবে। তারপর বন্দুকের আওয়াজ শুনে দৌড় শুরু করবে।
দৌড় সমাপ্ত : সমস্ত দৌড় একই জায়গায় শেষ হবে। শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যখন একই রেখায় সমাপ্তি রেখায় আসবে তখন দৌড় সমাপ্ত হয়েছে বলে ধরা হবে।
রিলে দৌড় : একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ৪ জন প্রতিযোগী সমান দূরত্বে ব্যাটন/কাঠি নিয়ে দৌড়ায় তখন তাকে রিলে দৌড় বলে।
১. হাতে ব্যাটন নিয়ে দৌড়াতে হবে।
২. ব্যাটন বদলের জায়গায় ব্যাটন পরিবর্তন করতে হবে।
৩. ব্যাটন বদলের জায়গা ২০ মিটার।
৪. ব্যাটনের দৈর্ঘ্য ২৮-৩০ সেমি, পরিধি ৩৮ মি মি ।
৫. ব্যাটন কাঠ, ধাতু বা ঐ জাতীয় বস্তু দ্বারা তৈরি হবে।
৬. ব্যাটন বদলের পর যার যার নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে হবে যতক্ষণ না অন্যান্য প্রতিযোগী তাকে অতিক্রম করে।
বাটন বদলের কৌশল : ব্যাটন বদলের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দৌড়ের গতিবেগ যেন না কমে সেজন্য ব্যাটন বদলের কৌশলের অনুশীলন বারবার করতে হয়। ব্যাটন বদলের কৌশল দু'রকমের (১) দেখে বদল (২) না দেখে বদল।
১. দেখে বদল : যখন ব্যাটন বদলের সময় পিছনের দিকে দেখে ব্যাটনটি বদল করে তখন তাকে দেখে বদ বলে।
২. না দেখে বদল: বদলের সময় পিছন থেকে স্পিডে দৌড়ে এসে না দেখে হাত থেকে ব্যাটনটি গ্রহণ করে তাকে না দেখে বদল বলে।
বাটন পাসের নিয়ম : ব্যাটন পাসের কৌশল দু'রকমের :
১. উপরের দিকে ধরে পাস ( Upward pass )
২. নিচের দিকে ধরে পাস (Downward pass)
১. উপরের দিক পাস : ব্যাটনটি হস্তান্তর করার সময় যদি ব্যাটনটির মাথা উপরের দিকে ধরে পাস করা হয়
তাকে আপওয়ার্ড পাস বলে।
২. নিচের দিকে ধরে পাস : ব্যাটনটি হস্তান্তর করার সময় ব্যাটনটির মাথা যদি নিচের দিকে ধরে পাস করা হয় তাহলে তাকে ডাউনওয়ার্ড পাস বলে। যেভাবেই পাস করা হোক না কেন এটা নির্ভর করে অনুশীলনের উপর।
আরও দেখুন...